সহপাঠ কার্যক্রম ভিকারটেক জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
ভিকারটেক জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শুধু পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক জ্ঞানচর্চার জন্যই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ ও সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি নিয়মিতভাবে সহপাঠ কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে, যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ, চারিত্রিক গঠন, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সহপাঠ কার্যক্রম বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক, নাচ, একাঙ্কিকা, গল্প বলা, বক্তৃতা ও অভিনয় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। জাতীয় দিবস যেমন- স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শহীদ দিবস প্রভৃতিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশপ্রেম, মানবিকতা এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ লালন করার সুযোগ পায়।
ক্রীড়া কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ, স্বাস্থ্য রক্ষা ও মানসিক সতেজতা বজায় রাখতে ক্রীড়া কার্যক্রম অপরিহার্য। বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর অন্তর্ভুক্ত থাকে—
ফুটবল
ভলিবল
ক্রিকেট
ব্যাডমিন্টন
হ্যান্ডবল
দৌড় প্রতিযোগিতা
লং জাম্প, হাই জাম্প
গোলক নিক্ষেপ, বল নিক্ষেপ
ক্রীড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দলগত কাজ, নেতৃত্ব, অধ্যবসায় ও শৃঙ্খলার শিক্ষা লাভ করে। অনেক শিক্ষার্থী আন্তঃবিদ্যালয়, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের খেলাধুলায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।
স্কাউট ও গার্লস গাইড কার্যক্রম
ভিকারটেক জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কাউটিং কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের অন্যতম জনপ্রিয় সহপাঠ কার্যক্রম। স্কাউট সদস্যরা শৃঙ্খলা, আত্মনির্ভরশীলতা ও সমাজসেবার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ওঠে। স্কাউট কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—
শিবির আয়োজন
ক্যাম্পফায়ার অনুষ্ঠান
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ
দুর্যোগকালীন ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম
পরিচ্ছন্নতা অভিযান
গার্লস গাইডদের বিশেষ প্রশিক্ষণ
এ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা গড়ে তোলে।
বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা
বিতর্ক প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক চিন্তাশক্তি, যুক্তি প্রদর্শন ক্ষমতা এবং বক্তৃতা দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, খেলাধুলা ও সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়। এতে তাদের চিন্তাভাবনা প্রসারিত হয় এবং জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
সাহিত্যচর্চা
বিদ্যালয়ের দেয়ালিকা, স্মারকগ্রন্থ বা বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ শিক্ষার্থীদের সাহিত্য প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। শিক্ষার্থীরা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, কার্টুন ও চিত্রাঙ্কন প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করতে পারে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা ও শিল্পবোধ গড়ে ওঠে।
সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রম
ভিকারটেক জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজসেবায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো—
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম
পরিচ্ছন্নতা অভিযান
দুর্যোগকালীন সময়ে দুর্গত মানুষকে সাহায্য প্রদান
রক্তদান কর্মসূচি
অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান
এ সকল কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সমাজ সচেতন, দায়িত্বশীল ও মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করে।
বিজ্ঞান মেলা ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী
বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শন করে, যা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়ে প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়তা করে।
ধর্মীয় ও নৈতিক কার্যক্রম
বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ধর্মীয় আলোচনা, কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, হামদ-নাত ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা ও মানবিকতা বৃদ্ধি পায়।
বার্ষিক শিক্ষা সফর ও ভ্রমণ
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধি, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর শিক্ষা সফর বা ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা লাভ করে।
উপসংহার
সার্বিকভাবে বলা যায়, ভিকারটেক জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি এই কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শারীরিক ও নৈতিক চেতনা জাগ্রত করছে। বিদ্যালয়ের এই ধারাবাহিক উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্য অর্জন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।